ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: করোনা মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে যখন প্রনোদনা দিচ্ছে সেই সময় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ খন্ডকালীন শিক্ষক (প্যারা শিক্ষক) ও ২ অফিস সহায়ককে চাকুরি হতে অব্যাহতি দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান সাক্ষরিত এক পত্রে ওইসব শিক্ষক কর্মচারীদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।পত্রে ১৫ জুলাই তারিখে সাক্ষর করা হলেও ওই পত্র সংশ্লিষ্টদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বৃহস্পতিবার।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ। বর্তমানে এখানে ৬ষ্ট থেকে ১০ শ্রেনী পর্যন্ত ৫ টি ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫’শ।অপরদিকে প্রধান শিক্ষক সহ নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন।শেষন রয়েছে ১৫টি।এ অবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়নে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাবেক প্রধান শিক্ষক গোলাম হাফেজ সহ ৭জনকে খন্ডকালীন শিক্ষক (প্যারাশিক্ষক) বা গেষ্ট টিচার এবং ২জনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়।
এদিকে করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ও বন্ধ থাকে।এ অবস্থায় করোনা মহামারীর কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের আর্থিক সংকুলান না হওয়ায় ১৫.০৭.২০ তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত শিক্ষক কর্মচারীদের যাবতীয় দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। ১৬.০৭.২০ তারিখ হতে এ আদেশ কার্যকর হবে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন-সাবেক প্রধান শিক্ষক গোলাম হাফেজ,খন্ডকালনি শিক্ষক-হোসেন আলী,আছমা কুলসুম,আরিফ হোসেন,ইন্দ্রজিৎ রায়,আন্জুমান আরা বেগম ও মুক্তারুল ইসলাম।এছাড়াও অফিস সহায়ক আবুল কাশেম ও মন্ডল।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান আব্দুল মান্নান জানান,৭জন খন্ডকালীন শিক্ষক বা গেষ্ট টিচার ও ২জন অফিস সহায়কের পেছনে বিদ্যালয়কে প্রতি মাসে ৫৪,৫০০/-টাকা ব্যয় নির্বাহ করতে হয়।বর্তমানে করোনার কারণে যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ এবং ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না এবং তাদেরকে প্রতি মাসে বেতন দেওয়ার কোন উৎস্য নেই।তাই ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে তাদেরকে আপাতত: চাকুরি হতে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।পরবর্তীতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে তাদের পুনরায় নিয়োগ বহাল করা হবে।
এ ব্যাপারে খন্ডকালীন শিক্ষক হোসেন আলী জানান,করোনার সময়ে সরকার যেখানে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে প্রনোদনা দিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে সেখানে রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয চাকুরি হতে অব্যাহতি দিয়ে অমানবিক আচড়ন করেছে। আছমা কুলসুম নামে অপর এক খন্ডকালীন শিক্ষক বলেন,আমরা যেহেতু এমপিওভুক্ত শিক্ষক নই সেক্ষেত্রে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রনোদনা দিয়ে সহায়তার পরিবর্তে চাকুরি কেড়ে নিয়ে আমাদের সংসারকে অভাব অনটনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আন্জুমান আরা বেগম নামে অপর একজন শিক্ষক বলেন,আমরা খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে চাকুরি করলেও পরিবারে একটা নসম্মানের জায়গায় ছিলাম।চাকুরি চলে যাওয়ায় আমাদের সেই মাটির সাখে মিশে গেছে। এ ব্যাাপরে বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এর ছোটভাই পরেশ চন্দ্র সেনকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে এডহক কমিটির অন্যতম সদস্য ও রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের আয়ের কোন উৎস্য নেই।ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন তুলে ওইসব শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হতো।কিন্তু করোনায় শিক্ষা কার্যক্রম না থাকায় বেতন আদায়ের কোন পথ না থাকায় আপাতত: তাদের কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে যাতে মাস শেষে তারা বেতন চাইতে না পারে। অবশ্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলা উদ্দীন আল আজাদকে মুঠোফেনে পাওয়া যায়নি।